ইমাম মুহাম্মাদ ইবন আলী ইবন হুসায়ন আল-বাকির (রা)’র ওরস শরীফ

ইমাম মুহাম্মাদ ইবন আলী ইবন হুসায়ন আল-বাকির (রা)’র ওরস শরীফ

ইমাম মুহাম্মাদ ইবন আলী ইবন হুসায়ন আল-বাকির (রা)’র ওরস শরীফ

আজ ৭ই যিলহজ্ব, সিলসিলায়ে আলিয়া ক্বাদেরিয়ার অন্যতম শায়খ আওলাদে রসূল (ﷺ) ইমাম মুহাম্মাদ ইবন আলী ইবন হুসায়ন আল-বাকির (রা)’র ওরস শরীফ।
🔷 পরিচয়:
হযরত রাসুলে কারীমের (ﷺ) দৌহিত্র হযরত হুসায়ন (রা) এর পৌত্র। তাঁর নাম মুহাম্মাদ, ডাকনাম আবু জাফার এবং উপাধি আল-বাকির। অর্থাৎ তিনি মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে হুসায়ন ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব আল কোরাইশী আল হাশেমি আবূ জাফর আল বাকির (রা)।
▪️তাঁর পিতা ইমাম যায়নুল আবিদীন আলী ইবন হুসায়ন (রা) এবং মাতা হযরত ইমাম হাসানের (রা) কন্যা উম্মু আবদিল্লাহ ফাতিমা। সুতরাং ইমাম হুসায়ন ও ইমাম হাসান (রা) যথাক্রমে তাঁর মহান দাদা ও নানা। তাঁর দাদা কারবালার ময়দানে শাহাদাত বরণ করেন।
🔷 জন্মতথ্য:
তিনি হিজরী ৫৭ সনের ১লা রজব মদীনায় জন্মগ্রহণ করেন। এই হিসাবে কারবালায় হযরত ইমাম হুসায়নের (রা) মর্মান্তিকভাবে শাহাদাত বরণের সময় তিনি তিন/চার বছরের শিশু মাত্র।
🔷 শিয়া জনগোষ্ঠীর অপপ্রচার ও খণ্ডন :
শিয়াগণ ইমাম বাক্বির (রা)-কে তাদের ধর্মের ৫ম ইমাম বলে প্রচার করে আসছে। তারা মূলত খিলাফতের যোগ্য ও উপযুক্ত সম্মানিত সাহাবী গণকে গালমন্দ করত এবং তাদেরকে খিলাফতের অযোগ্য মনে করত, যা চরম পথভ্রষ্টতা। অথচ নিজের পূর্বপুরুষ ও অন্যান্য মহান ব্যক্তির মত হযরত আবু বকর ও উমারের (রা) প্রতিও ছিল হযরত বাক্বির (রা)–এর প্রগাঢ় ভক্তি ও শ্রদ্ধাবােধ। তিনি নিজেই এ বিষয়ে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।
⏩সালিম ইবন আবী হাফসা বলেন,
“আমি ইমাম আল-বাকির ও তাঁর পুত্র জাফার আস-সাদিকের নিকট আবু বকর ও উমারের (রা) ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি, তিনি বলেন, সালিম! আমি তাঁদেরকে ভালােবাসি এবং তাঁদের দুশমনদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। তাঁরা দু’জন ছিলেন পথপ্রদর্শক ইমাম। আমাদের পরিবারের সকলকে তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে দেখেছি।”
⏩সকল সাহাবীকে তিনি হক্বের উপর বিশ্বাস করতেন ও লোকদেরকে ও এ ব্যাপারে জানাতেন। যেমন বর্ণিত আছে,
إنما وليكم الله و رسوله و الذين آمنوا’
তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ তাঁর রসূল ও মু’মিনগণ’ (৫:৫৫)
তিনি পবিত্র কুরআনের এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন, তাঁরা হলেন মুহাম্মদ ﷺ এর সাহাবীগণ। উরওয়াহ্ বলেন: তারা তো বলেছেন তিনি হলেন আলী। আবূ জা’ফর বললেন: আলী, মুহাম্মদ ﷺ এর সাহাবীগণের একজন।
⏩ জাবির আল- জু’ফী (র) বলেন: মুহাম্মদ ইব্‌ন আলী আল-বাক্বির (র) আমাকে বললেন : হে জাবির! আমি শুনতে পেয়েছি, ইরাকের একদল মানুষ মনে করে যে, তারা আমাদেরকে ভালবাসে এবং আবূ বকর সিদ্দিক্ব (রা) ও উমর ফারক (রা)-এর সমালোচনা করে। তারা মনে করছে, আমি তাদেরকে সে ব্যাপারে আদেশ করেছি। তুমি আমার পক্ষ থেকে তাদেরকে জানিয়ে দাও, আমি মহান আল্লাহর অনুগত এবং তাদের থেকে দায়মুক্ত। শপথ সেই সত্তার, যার হাতে মুহাম্মদ (ﷺ)-এর জীবন! আমি যদি ক্ষমতা লাভ করি, তাহলে আমি তাদের রক্ত ঝরিয়ে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করব। আমি যদি আবূ বকর (রা) ও উমর (রা)-এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ও রহমতের দু’আ না করি, তাহলে মুহাম্মদ ﷺ এর শাফাআত যেন আমার নাগাল না পায়। নিশ্চয় মহান আল্লাহর শত্রুরা তাদের মর্যাদা ও অগ্রসরতা সম্পর্কে অনবহিত। তুমি তাদেরকে জানিয়ে দাও, আমি তাদের থেকে এবং যারা আবূ বকর (রা) ও উমর (রা) থেকে দায়মুক্ত, তাদের থেকে দায়মুক্ত।
⏩জাবির (রা) বলেন,
“একবার আমি মুহাম্মাদ ইবন আলী (রা) কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার বংশের কেউ কি আবু বকর ও উমারকে (রা) গালি দিতেন? বললেন, না। আমি তাঁদেরকে ভালােবাসি এবং তাঁদের মাগফিরাতের দু’আ করি।”
🔷 বিশিষ্ট মনীষীগনের দৃষ্টিতে ইমাম বাকের (রা.) :
⏩ মুহাম্মাদ ইবন আল-মুনকাদির বলেন, “যতদিন আমি মুহাম্মাদকে না দেখেছি ততদিন মনে করতাম, এমন কোন আলিম নেই যাঁকে ‘আলী ইবন হুসায়ন যায়নুল আবিদীনের (রা) উপর প্রাধান্য দেওয়া যায়।”
⏩ ইমাম যাহাবী (র) বলেন, “তিনি তাঁর সময়ে বানু হাশিমের নেতা ছিলেন।”
⏩ ইমাম নাওবী (র) বলেন, “তিনি একজন অতি সম্মানিত তাবিঈ ও শ্রেষ্ঠ ইমাম ছিলেন। তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাপারে সকলে একমত।”
⏩ আব্দুল্লাহ ইবনে আ’তা (রা) বলেন, “আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবনে আলীর সামনে যত বড় আলিমই উপবেশন করতেন, তাকে ছোট বলে মনে করতেন। আমি হাকামকে তাঁর নিকট দেখলাম যেন তিনি একজন শিক্ষার্থী।”
🔷 ইমাম বাকের (রা.)’র প্রসিদ্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ উক্তিসমূহ:
১. ইতর লোকদের অস্ত্র হলো অকথ্য ভাষা।
২. আলস্য ও বিরক্ত হতে নিজেকে রক্ষা করো। কেননা, এই দুটি দোষ সব অপকর্মের চাবিকাঠি।
৩. সবচেয়ে কঠিন আমল তিনটি। সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করা, নিজের সঙ্গে ইনসাফ করা, সম্পদে ভাইয়ের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রদর্শন করা।
৪. আল্লাহর শপথ! ইবলিশের নিকট এক হাজার ইবাদতকারীর মৃত্যু অপেক্ষা একজন আলিমের মৃত্যু প্রিয়।
৫. তিনি বলেন,
لقد غرت الدنيا رجالا فالصبحوا ★ بمنزلة ما بعدها متحول
অর্থাৎ, দুনিয়া বহু মানুষকে ধোকায় ফেলে দিয়েছে। ফলে তারা এমন এক পর্যায়ে গিয়ে উপনীত হয়েছে, যেখান থেকে উত্তরণের কোনো সুযোগ নেই।
৬. “আকাশ হতে যদি তারকার সমান বজ্রও অবতরণ করে, তা যিকিরকারীকে আক্রান্ত করবে না।”
🔷 ওফাত:
তিনি খলিফা হিশাম ইবনে আব্দুল মালিকের দ্বারা বিষ প্রদানের মাধ্যমে ৭ জিলহজ্ব, ১১৫ বা ১১৭ হিজরীতে ইনতিকাল করেন এবং দেহ মোবারক মদীনায় জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয়।
📚তথ্যসূত্র:
১. সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরিয়া পীর মাশায়েখ পরিচিতি
২. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া