শারিরীক অসুস্থতার কারণে অনেক সময় বসে নামাজ পড়তে হয়। তাই সিজদার নিয়ম জানা বেশি জরুরি। লোকমুখে শুনি ইশারায় দেওয়া উওম, আবার কেউ কেউ বলে বালিশে বা টেবিলে দেওয়া উওম।। আসলে কোনটি সঠিক??

 শারিরীক অসুস্থতার কারণে অনেক সময় বসে নামাজ পড়তে হয়। তাই সিজদার নিয়ম জানা বেশি জরুরি। লোকমুখে শুনি ইশারায় দেওয়া উওম, আবার কেউ কেউ বলে বালিশে বা টেবিলে দেওয়া উওম।। আসলে কোনটি সঠিক??

আসসালামু আলাইকুম।

আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। নিম্নে অসুস্থ ব্যক্তির নামাজ আদায়ের নিয়ম ও কতিপয় মাসআলা দেয়া হলো। আপনি আপনার শারীরিক অসুস্থতা অনুযায়ী নিম্নের কোন নিয়মটি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সেটি বুঝে নিতে পারবেন আশা করি।।

✍🏻অসুস্থ ব্যক্তির নামাজ আদায়ের পদ্ধতিঃ

 হাদিস নং-১ঃ 

হাদিসে আছে,,  হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) অসুস্থ ছিলেন। হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমালেন, দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ো, সক্ষম না হলে বসে পড়ো, তাতেও সামর্থ্য না হলে শুয়ে পড়ো, আল্লাহ তায়ালা সাধ্যের বাইরে কোনো আত্মাকে কষ্ট দেন না”। উক্ত হাদিসটি ইমাম মুসলিম (রাঃ) ব্যতীত মুহাদ্দেসীন কেরামের এক বৃহৎ জামায়াত বর্ননা করেছেন। 

হাদিস নং-২ঃ

 ইমাম বাযযার (রাঃ) তার  “আল- মুসনাদ” এবং ইমাম বায়হাকী (রাঃ) তার আল মা’রিফাতুল সুনানি ওয়াল আছার গ্রন্থে হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন- নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা কোনো এক রুগ্ন ব্যক্তির সেবা যত্নের জন্য তাশরীফ নিলেন, দেখলেন বালিশের উপর নামাজ পড়ছে অর্থাৎ হুজুর তা নিক্ষেপ করলেন, সে একটি কাঠ নিল তাতে সে নামাজ পড়ছে হুজুর তাও নিক্ষেপ করলেন, ইরশাদ করলেন, জমিনের উপর নামাজ পড়বে, যদি সামর্থ্যবান হও, অন্যথায় ইঙ্গিতে পড়বে এবং সিজদাকে রুকু থেকে অবনত করবে”।

 

উক্ত হাদিসদ্বয় এবং ফিকহী কিতাবের আলোকে অসুস্থ ব্যক্তির নামাজ আদায়ের পদ্ধতি নিম্নে বর্ণিত হলঃ

১)  যে ব্যক্তি রোগের কারণে দাঁড়াতে পারে না,  সে বসে নামাজ পড়তে পারে। এমতাবস্তায় জমিনে বা মাটিতে বসে ইশারায় রুকু করবে। সামনের দিকে ভালোমত ঝুঁকে তাসবীহ পাঠ করবে।  পুনরায় সোজা হয়ে যাবে,এরপর স্বাভাবিক অবস্থায় যেভাবে সাজদা করা হয়, সেভাবে সাজদা করবে। [ তারবিয়াতে নেসাব পৃষ্ঠাঃ ১৯২]

২) যে ব্যক্তি রোগের কারণে রুকু সিজদা করতে পারে না, কিংবা শুধু সিজদা করতে পারে না কিন্তু দাঁড়াতে পারে। এমতাবস্থায় নামাজ আদায়ের পদ্ধতি হল- ব্যক্তি দাঁড়িয়ে ক্বেরাত পাঠ শেষে রুকু এবং সিজদা উভয়ে যদি স্বাভাবিক নিয়মে করতে অপারগ হয়, তাহলে রুকু এবং সিজদা উভয়ে ইশারা পড়বে।আর যদি রুকু স্বাভাবিক নিয়মে করতে সক্ষম হয়,তাহলে ওভাবে করবে।রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে চেয়ার বা কোন কিছুর উপর বসে ইশারায় সিজদা আদায় করবে।

ইশারায় সিজদা আদায়ের নিয়ম হল-

চেয়ার বা উচু কোন কিছুর উপর বসে দু’হাত দু’হাটুর উপর রেখে মাথা পশ্চিমদিকে ঝুকে দিবে।তাসবীহ এবং প্রথম সিজদা আদায় করে মাথা সোজা করে অল্প কিছুক্ষণ বসে আবার দ্বিতীয় সিজদার জন্য ইশারা করবে একই নিয়মে।

(ফতোয়ায়ে আলমগীরী, দুরুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার,বাহারে শরীয়ত পৃঃ১৩৩)

৩) ব্যক্তি এমন রোগাক্রান্ত যে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তেও অক্ষম আবার বসে সিজদাও করতে পারে না, তাহলে এমন ব্যক্তির নামাজ আদায়ের পদ্ধতি হল—

” চেয়ার বা উঁচু আসনে বসে কেরাত পাঠ করে রুকু সিজদা উভয়ই ইশারায় পূর্ব বর্ণিত নিয়মে আদায় করবে। এ ক্ষেত্রে রুকুতে তুলনামূলক কম ঝুকবে এবং সিজদায় একটু বেশি ঝুকবে।

[বিঃদ্রঃ সিজদার জন্য বালিশ ইত্যাদি কোনো বস্তু কপালের নিকট তুলে এর উপর সিজদা করা মাকরুহে তাহরীমি]

(দুররুল মুখতার )

 ৪)যদি অসুস্থ ব্যক্তি দাঁড়াতে এমনকি বসতেও সক্ষম না হয়, তখন শুয়ে ইশারায় পড়বে। এমনভাবে চিত হয়ে শু’বে যেন পা ক্বিবলার দিকে থাকে এবং হাটু খাড়া থাকে এবং মাথার নিচে বালিশ ইত্যাদি দিবে,যেন মাথা উঁচু হয়ে ক্বেবলার দিকে হয়ে যায়। রুকু সিজদা ইশারায় করবে, অর্থাৎ মাথাকে যতটুকু ঝুকানো যায়, ততটুকু সাজদার জন্য ঝুকাবে এবং রুকুর জন্য এর থেকে কম ঝুকাবে।

অনুরূপ ডান বা বাম পার্শ্বের উপর শুয়েও কেবলার দিকে মুখ করে নামাজ পড়া যায়। [ তারবিয়াতি নেসাব পৃঃ ১৯২,বাহারে শরীয়ত পৃঃ ১৩৪ ]

৫) যদি সুস্থ ব্যক্তি কপালে যখম বা ক্ষতি হয় সিজদার জন্য মাথা স্থাপন করতে পারছে না, তখন নাক দিয়ে সিজদা করবে। এরূপ না করে ইশারা করলে নামাজ হবে না। (ফতোয়ায়ে আলমগীরি)

 

উপরোক্ত ফিকহী মাসাঈল থেকে বুঝা যায় যে, সুস্থ ব্যক্তিকে অবশ্যই জমিনে বা মাটিতে সিজদা করতে হবে,  এখন ব্যক্তি যদি এমন অসুস্থ হয় যার দরুন জমিনে বা মাটিতে সিজদা করতে পারছেনা, তাহলে তিনি ইশারায় সিজদা করবেন। চেয়ারে বসে ইশারায় সেজদা করবেন, সামনে টেবিল বা কোন কিছুর উপর সিজদা দেওয়ার প্রয়োজন নেই, টেবিলে জায়নামায রাখতে পারেন এটা ইচ্ছাধীন কিন্তু সিজদা ইশারায় দিতে হবে। 

 

📚তথ্যসূত্রঃ

📌গাউসিয়া তারবিয়াতি নেসাব।

📌বাহারে শরীয়ত।

📌ফতোয়ায়ে আলমগীরী

📌দুরুল মুখতার

📌রদ্দুল মুহতার