কাযা নামাজ কি প্রতিদিন পড়া যায় এবং প্রতি ওয়াক্তের সাথে কত দিনের কত কাযা নামাজ পড়া যায় একসাথে?

কাযা নামাজ কি প্রতিদিন পড়া যায় এবং প্রতি ওয়াক্তের সাথে কত দিনের কত কাযা নামাজ পড়া যায় একসাথে?

আসসালামু আলাইকুম।

কাযা নামাজের সংখ্যা যদি ৫ ওয়াক্ত বা তার কম হয় তাহলে তারতীব অনুযায়ী সম্পন্ন করতে হয়, যেমন, ফযর, যোহর কাযা হলে প্রথমে ফযর, তারপর যোহর, তারপর আসর এভাবে পড়তে হবে।  কারো যে কোন ওয়াক্ত থেকে নামাজ কাযা হলে আগে কাযা নামাজ আদায় করে তারপর যে ওয়াক্তের নামাজ আসবে তা আদায় করতে হবে। ওই ওয়াক্তের নামাজ, কাযা নামাজ সম্পন্ন করার আগে পড়লে শুদ্ধ হবে না। 

তবে কাযা নামাজের কথা মনে না থাকায় আগে ওয়াক্তিয়া নামাজ সম্পন্ন করলে ওয়াক্তিয়া নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে। আর যদি সময় এতই কম হয় যে কাযা নামাজ সম্পন্ন করতে গেলে ওয়াক্তিয়া নামাজের সময় শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে আগে ওয়াক্তিয়া নামাজ পড়ে নেবে। 

ছয় বা ততোধিক ওয়াক্বতের নামাজ কাযা হলে ফজরের ক্বাযা ফজরের সময়, যোহরের কাযা যোহরের সময় এবং আসরের কাযা আসরের সময়- এভাবে সম্পন্ন করবে। 

  • ওমরী কাযা নামাজ 

✓যে ব্যক্তি বালেগ হবার পর যথারীতি পাঞ্জেগানা নামাজ আদায় করেনি এবং জীবনে তার অনেক ওয়াক্বতের নামাজ ক্বাযা হয়ে গিয়েছে, এরূপ ব্যক্তি অনুমান করে অতীতের ক্বাযা নামাজসমূহ সম্পন্ন করাকে ‘ওমরী কাযা’ বলা হয়। এর সহজ নিয়ম এ যে, প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজের সাথে সমপরিমাণ ফরয নামাজ ক্বাযা হিসেবে পড়তে থাকা। এভাবে ক্বাযা আদায় করতে করতে যখন নিজ অন্তরে এরূপ সুদৃঢ় ধারণা জাগবে যে, এতদিনে আমার অতীতের জীবনের ক্বাযা নামাজ আদায় হয়ে গিয়েছে, তখন থেকে ক্বাযা পড়া ত্যাগ করতে হবে। এভাবে ক্বাযা নামাজ আদায় করে দেয়া প্রত্যেক মুসলমানেরই কর্তব্য। অন্যথায় ক্বিয়ামতের দিন এক ওয়াক্বত নামাজের জন্য  দীর্ঘ ৮০ ‘হোক্ববা’ পরিমাণ সময় দোযখের আগুনে জ্বলতে হবে। ১ হোক্ববা মতান্তরে দুনিয়ার পাঁচশত বৎসরের সমান। 

ওমরী কাযা নামাজ দুভাবে আদায় করা যায়——

✓ওমরী কাযা’ পড়ার সময় এ নিয়মও পালন করা যেতে পারে যে,প্রথমে সকল ফজরের নামাজ পড়ে নেবে।তারপর সকল যোহরের  সকল ফরয নামাজ, তারপর  আসরের সকল ফরয নামাজ,তারপর মগরিবের সকল ফরয  নামাজ ও এশারের সকল ফরয নামাজ,তারপর সকল বিতর কাযা করবে।

✓অথবা প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজের পূর্বে প্রতিদিন ওই ওয়াক্তের নামাজের কাযা আদায় করা, সেটা এক ওয়াক্ত কিংবা সময় থাকলে বেশ কয়েক ওয়াক্ত।

  • প্রত্যেক দিনের কাযা করতে সর্বমোট ২০ রাক’আত ফরয ফজরের ফরয নামাজের কাযা পড়তে হয়ঃ২ রাক’আত,যোহরের ৪রাক’আত ফরয আসরের ৪ রাক’আত ফরয,মগরিবের ৩রাক’আত ফরয এবং বিতরের ৩ রাক’আত ওয়াজিব নামাজ।
  • আর প্রত্যেকবার নিয়্যত করার সময় বলবে-ফজরের কাযা পড়ার সময় ফজরের সর্বপ্রথম যে নামাজ আমার কাযা রয়েছে  তা আমি আদায় করছি। যোহর,আসর,মাগরিব,এশা ও বিতরের কাযা করার সময়ও প্রত্যেকবার এভাবে বলবে।(কারণ কাযা যখন আদায় করছেন, তখন ওই কাযা নামাজ আপনার কাছ থেকে আদায় হয়ে যাচ্ছে, তাই প্রত্যেকবার জীবনের প্রথম অমুখ নামাজের কাযা বলতে হবে নিয়্যতে)

 

  • কাযা নামাজ গোপনে সম্পন্ন করবেন

কাযা নামাজগুলো গোপনে সম্পন্ন করবেন।অন্য কেউ এমনকি পরিবারবর্গ এবং ঘনিষ্ট বন্ধু -বান্ধবের নিকটও প্রকাশ করবে না।তাদের কাউকে এভাবে বলবে যে,আমার অমুক নামাজ কাযা হয়ে গেছে কিংবা আমি ‘ওমরী কাযা’ সম্পন্ন করছি। কেনবা গুনাহর কথা প্রকাশ করাও ‘মাকরূহ-ই-তাহরীমি’ তথা গুনাহর কাজ।

 

তথ্যসূত্র-গাউসিয়া তারবিয়াতী নেসাব (১৮৮-১৯২ নং পৃষ্টা)