অপারগ হলে চেয়ারে বসে ইশারায় নামাজ পড়া কি জায়েজ???

অপারগ হলে চেয়ারে বসে ইশারায় নামাজ পড়া কি জায়েজ???

আসসালামু আলাইকুম। 

নিম্নে অসুস্থ ব্যক্তির নামাজ আদায়ের নিয়ম ও কতিপয় মাসআলা দেয়া হলো। আপনি আপনার শারীরিক অসুস্থতা অনুযায়ী নিম্নের কোন্ নিয়মটি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সেটি বুঝে নিতে পারবেন আশা করি।।

অসুস্থ ব্যক্তির নামাজ আদায়ের পদ্ধতিঃ

১)  যে ব্যক্তি রোগের কারণে দাঁড়াতে পারে না,  সে বসে নামাজ পড়তে পারে। এমতাবস্তায় জমিনে বা মাটিতে বসে ইশারায় রুকু করবে। সামনের দিকে ভালোমত ঝুঁকে তাসবীহ পাঠ করবে।  পুনরায় সোজা হয়ে যাবে,এরপর স্বাভাবিক অবস্থায় যেভাবে সাজদা করা হয়, সেভাবে সাজদা করবে।

২) যে ব্যক্তি রোগের কারণে রুকু সিজদা করতে পারে না, কিংবা শুধু সিজদা করতে পারে না কিন্তু দাঁড়াতে পারে। এমতাবস্থায় নামাজ আদায়ের পদ্ধতি হল- ব্যক্তি দাঁড়িয়ে ক্বেরাত পাঠ শেষে রুকু এবং সিজদা উভয়ে যদি স্বাভাবিক নিয়মে করতে অপারগ হয়, তাহলে রুকু এবং সিজদা উভয়ে ইশারা পড়বে।আর যদি রুকু স্বাভাবিক নিয়মে করতে সক্ষম হয়,তাহলে ওভাবে করবে।রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে চেয়ার বা কোন কিছুর উপর বসে ইশারায় সিজদা আদায় করবে।

ইশারায় সিজদা আদায়ের নিয়ম হল-

চেয়ার বা উচু কোন কিছুর উপর বসে দু’হাত দু’হাটুর উপর রেখে মাথা পশ্চিমদিকে ঝুকে দিবে।তাসবীহ এবং প্রথম সিজদা আদায় করে মাথা সোজা করে অল্প কিছুক্ষণ বসে আবার দ্বিতীয় সিজদার জন্য ইশারা করবে একই নিয়মে।

৩) ব্যক্তি এমন রোগাক্রান্ত যে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তেও অক্ষম আবার বসে সিজদাও করতে পারে না, তাহলে এমন ব্যক্তির নামাজ আদায়ের পদ্ধতি হল—

“চেয়ার বা উঁচু আসনে বসে কেরাত পাঠ করে রুকু সিজদা উভয়ই ইশারায় পূর্ব বর্ণিত নিয়মে আদায় করবে। এ ক্ষেত্রে রুকুতে তুলনামূলক কম ঝুকবে এবং সিজদায় একটু বেশি ঝুকবে।

[বিঃদ্রঃ সিজদার জন্য বালিশ ইত্যাদি কোনো বস্তু কপালের নিকট তুলে এর উপর সিজদা করা মাকরুহে তাহরীমি]

৪)যদি অসুস্থ ব্যক্তি দাড়াতে এমনকি বসতেও সক্ষম না হয়, তখন শুয়ে ইশারায় পড়বে। এমনভাবে চিত হয়ে শু’বে যেন পা ক্বিবলার দিকে থাকে এবং হাটু খাড়া থাকে এবং মাথার নিচে বালিশ ইত্যাদি দিবে,যেন মাথা উঁচু হয়ে ক্বেবলার দিকে হয়ে যায়। রুকু সিজদা ইশারায় করবে, অর্থাৎ মাথাকে যতটুকু ঝুকানো যায়, ততটুকু সাজদার জন্য ঝুকাবে এবং রুকুর জন্য এর থেকে কম ঝুকাবে।

অনুরূপ ডান বা বাম পার্শ্বের উপর শুয়েও কেবলার দিকে মুখ করে নামাজ পড়া যায়। 

৫) যদি সুস্থ ব্যক্তি কপালে যখম বা ক্ষতি হয় সিজদার জন্য মাথা স্থাপন করতে পারছে না, তখন নাক দিয়ে সিজদা করবে। এরূপ না করে ইশারা করলে নামাজ হবে না।

 

🟤উপরোক্ত ফিকহী মাসাঈল থেকে বুঝা যায় যে, সুস্থ ব্যক্তিকে অবশ্যই জমিনে বা মাটিতে সিজদা করতে হবে, এখন ব্যক্তি যদি এমন অসুস্থ হয় যার দরুন জমিনে বা মাটিতে সিজদা করতে পারছেনা, তাহলে তিনি ইশারায় সিজদা করবেন। চেয়ারে বসে ইশারায় সেজদা করবেন, সামনে টেবিল বা কোন কিছুর উপর সিজদা দেওয়ার প্রয়োজন নেই, টেবিলে জায়নামাজ রাখতে পারেন এটা ইচ্ছাধীন কিন্তু সিজদা ইশারায় দিতে হবে। আর যদি কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়াতে পারে, তাহলে দাঁড়িয়ে নামাজ শুরু করা ফরয। অতঃপর বসে নামাজ পূর্ণ করবে। 

🚫বিঃদ্রঃ সামান্য জ্বর-স্বর্দি, মাথা ব্যাথা বা এ ধরণের নগণ্য কষ্টসমূহ, যেগুলা নিয়ে মানুষ চলাফেরা করে, কখনও ওযর হিসেবে গণ্য হবে না। এমনি সাধারণ অসুখে যেসব নামাজ বসে পড়া হবে, সেগুলে শুদ্ধ হবে না। ওইগুলোর ক্বাযা অপরিহার্য। 

📚তথ্যসূত্রঃ📌গাউসিয়া তারবিয়াতি নেসাব।(পৃ-১৯২)

📌বাহারে শরীয়ত। (৪র্থ খন্ড, পৃ-১৩৩)